তৃণমূল ঢেলে সাজাচ্ছে কক্সবাজার জেলা আ’লীগ : সক্রিয় হয়ে উঠছে নেতা-কর্মীরা

বিশেষ প্রতিবেদক •

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তৃণমূল ঢেলে সাজাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দীর্ঘ দিন দল গোছানোর কাজ বন্ধ ছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সাংগঠনিক সফর ও জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের কাজ শুরু করেছে দলটি।

নির্বাচনের আগেই তৃণমূলের বিরোধ মেটানো এবং সম্মেলনের কাজ সম্পন্ন করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে দলকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করানোই মূল উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে গঠিত বিভাগীয় আটটি টিম বেশ তৎপর রয়েছে।

এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী জুন মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মে মাসের মধ্যে সব উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বুধবার তৃণমূলের প্রতিনিধি সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সব সম্মেলন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেলার নেতা-কর্মীরা।

একসঙ্গে জেলা ও উপজেলার সব কমিটির সম্মেলনের ঘোষণা আসায় আওয়ামী লীগে চাঙা ভাব দেখা দিয়েছে। বুধবার রাত থেকেই সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু হয়েছে।

এবার বেশ বড়সড় আয়োজনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিনিধি সম্মেলন করা হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, তেমনি ক্ষোভও ছিল। সভায় ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহি প্রকাশ দেখা গেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রিক দলের ভেতরে নৈরাজ্য, নির্বাচনে দলের সাংসদ ও শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানো, নিজে প্রার্থী হতে না পেরে ভাই বা পরিবারের লোকজন ও অনুগত ব্যক্তিকে প্রার্থী করা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেতারা এককভাবে ভোগ করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের নেতারা।

এ ছাড়া বেশির ভাগ তৃণমূল নেতা দলের শীর্ষ পদদারী নেতাদের বিরুদ্ধে আত্মীয়করণ-স্বজনপ্রীতি, দলে কোন্দল সৃষ্টি, কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে।

দলের একাধিক নেতারা জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা সাংগঠনিক কার্যক্রম-এ প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে নিজেদের অভাব-অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে পেরে সন্তুষ্ট। নেতারাও কর্মীদের সব কথা গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন এবং আমলে নিয়েছেন।

শহরের মোটেল উপলের জারা কনভেনশন হলের এই প্রতিনিধি সম্মেলন সাম্প্রতিক সময়ে বড় দলীয় সাংগঠনিক জমায়েত বলে মনে করেন দলীয় নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ প্রতিনিধি সভায় জেলার ১১টি সাংগঠনিক উপজেলা, চারটি পৌরসভা, ৭১ ইউনিয়ন ও সহযোগী সংগঠনের সাড়ে ৩ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন। এ ছাড়া প্রতিনিধির বাইরে আরও হাজার তিনেক নেতা কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেছেন।

এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ।

সভায় কক্সবাজার পৌরসভা ও ১০ উপজেলায় আগামী ২৮ মে’র (রমজান মাস বাদ রেখে) মধ্যে সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভায় (শহর) আগামী ২৪ মার্চ সম্মেলন করা হবে।

উপজেলাগুলোর মধ্যে চকরিয়ায় ২ এপ্রিল, কুতুবদিয়ায় ১৫ মে, মাতামুহুরি সাংগঠনিক থানায় ১৬ মে, টেকনাফে ২১ মে, মহেশখালী ২২ মে, রামুতে ২৩ মে, ঈদগাঁওতে ২৫ মে, সদরে ২৬ মে, পেকুয়ায় ২৭ মে ও উখিয়ায় ২৮ মে সম্মেলন ও কাউন্সিলের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এরপরই জুন মাসের যেকোনো দিন জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, মার্চ ও মে মাসে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবশেষে জুনে জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

সভায় দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ঘোষণা দেন, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে যাঁরা স্থানীয় সরকার পরিষদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের দলীয় পদে রাখা যাবে না এবং কেউ নতুন কমিটিতেও পদ পাবে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম বলেন, জেলার সব পর্যায়ের কমিটির সম্মেলন ঘোষণায় নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল বলেন, প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দেওয়া সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করা হবে। যাঁরা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের আসন্ন কাউন্সিলে দলীয় পদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আমরা কোনো সাংগঠনিক কাজ করতে পারেনি। আমাদের নেত্রী নতুন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তা ছাড়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কাজও শুরু হয়েছে।